মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণ ধর্ষণের মূলহোতা এইচ এম আবুল কাসেম ওরফে বখাটে কাসেম (২২) এখনো অধরা! ‘গ্যাং রেপ’ লিডার বখাটে কাসেম বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড়ের ওয়াজ খাতুন পাড়া গ্রামের মকছুদ আহমেদের পুত্র। এছাড়াও গ্যাং রেপ লিডার কাসেমের অপর দুই সহযোগী পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজী পাড়া গ্রামের বাদশার পুত্র বখাটে আলমগীর (২০) ও নুরুল হকের বখাটে পুত্র রবি আলমও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ধর্ষণে জড়িত এ তিন বখাটে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। স্থানীয়রা অবিলম্বে এই তিন বখাটকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদপূর্বক মাদ্রাসা ছাত্রী আত্মহত্যার রহস্য উন্মোচন করার জন্য এলিট ফোর্স র্যাবের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও বিষয়টি ছায়া তদন্ত করার জন্য এলাকাবাসীরা কক্সবাজার সিআইডি পুলিশের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত: গত ২৩ জুলাই গভীর রাতে রাজাখালী ইউনিনের হাজী পাড়া গ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলীর মাদ্রাসা পড়ুয়া কন্যা রেখা মণিকে অপহরণ করে বাড়ির অদূরে মৎস্য ঘেরের একটি বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক গণ ধর্ষণ করে ছনুয়ার বখাটে কাসেমের নেতৃত্বে তার অপর দুই সহযোগী আলমগীল ও রবি আলম। এরপর ২৪ জুলাই ওই ছাত্রী ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। পরে সকালে পেকুয়া থানার এস আই নাজমুলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমানে আত্মহননকারী রেখা মনি (১৭) উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজী পাড়া গ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলীর মেয়ে। সে রাজাখালী বহুমুখী বেশারাতুল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ছিল।
এদিকে ওই ছাত্রীর পিতা অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে ধর্ষষকারী আবুল কাসেম ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণপূর্বক ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে পেকুয়া থানায় মামলার করার জন্য একটি লিখিত এজাহার দিলেও থানা পুলিশ সেটি মামলা না নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে। অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড হওয়ায় ধর্ষকেরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন তারা স্বামী-স্ত্রী বাঁশখালী উপজেলায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ২৩ জুলাই রাতে বাড়িতে তার কন্যা রেখা মনি ও এক ছেলে ছিল। গভীর রাতে তার ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে বাড়ীতে এসে বখাটে কাসেম ও সহযোগীরা কন্যা রেখা মনিকে অপহরণ করে বাড়ীর অদূরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। রাতে স্থানীয়রা ধাওয়া করেছে ধর্ষকদের। স্থানীয়রা পুরো ঘটনা সম্পর্কে অবহিত। পরদিন সকালে তার মেয়ে ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে বাড়ির সকলের অগোচরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার পূর্বে তার কন্যা ওই তিন ধর্ষকের নাম বলে গেছে। ওই তিন ধর্ষকদের কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার মেয়েকে ধর্ষণকারী বখাটে কাসেমসহ সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ কঠোর বিচার দাবি করেছেন তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের সুত্রে ও ঘটনার পর সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীর ইউনিয়নের পাশের ইউনিয়ন বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের ওয়াজ খাতুন পাড়া গ্রামের মকছুদ আহমদের পুত্র এইচ এম আবুল কাসেম ওরফে বখাটে কাসেম। মকছুদ আহমদের তৃতীয় পুত্র বখাটে কাসেম। বছর খানেক পূর্বে ছনুয়ার আরো এক ছাত্রীকে রাতের আধারে ধর্ষণ করেছিল ওই বখাটে কাসেম। পরিবারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বখাটে কাসেমের নেতৃত্বে রাজাখালী আরবশাহ বাজার-ছনুয়া ওয়াজ খাতুন পাড়া কেন্দ্রীক একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব কিশোর গ্যাংযের নেতৃত্বে দিয়ে আসছিল বখাটে কাসেম।
স্থানীয়দের সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রায় সময় বখাটে কাসেমের নেতৃত্বে তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রামের কিশোরী মেয়েদের নানাভাবে উত্তক্ত করে। এলাকায় চুরি ও ছিনতাইসহ নানান অসামাজিক কার্যকলাপের সাথেও জড়িত রয়েছে বখাটে কাসেমের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এভাবে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ সংগঠিত করে মারাত্মকভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠলেও কিশোর গ্যাংয়ের লিডার বখাটে কাসেমের বিরদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
ছনুয়া ওয়াজ খাতুন পাড়ার এক বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, এলাকার মকছুদ আহমদের পুত্র বখাটে কাসেম এলাকার বহু কিশোরী মেয়েকে নষ্ট করেছে। পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অল্প বয়সেই গ্যাং রেপ লিডার হয়ে উঠেছে বখাটে কাসেম। এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হুমকি দিত ওই বখাটের দল।
পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার জানান, রাজাখালীতে ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ওই ছাত্রীর ময়না তদন্ত শেষে গতকাল ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ এ ঘটনায় নিরপেক্ষ ভূমিকার পালন করছে।
ওসি কানন সরকার আরো বলেন, ময়না তদন্তে রিপোর্টে ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ছাত্রীর পিতার এজাহার না নেওয়ার প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ওই ছাত্রী যেহেতু বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। সেটি প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। যদি আত্মহত্যার পূর্বে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে সেটি তো ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে পুলিশ অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই ছাত্রীর পিতার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ কোন অপরাধের পক্ষে নয়। বরং অপরাধ নির্মূলে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
পাঠকের মতামত: